সাতকরা চাষ পদ্ধতি, ঔষধি গুন ও রান্নার কৌশল

সাতকরা একটি লেবু জাতীয় ফল। ইহা টক স্বাদযুক্ত বহুবিধ ঔষধি গুন সম্পন্ন ফল।

সাতকরা সিলেট অঞ্চলের একটি জনপ্রিয় ফল।
সিলেটসহ সারাদেশে বর্তমানে এ ফলের সমাদর বাড়ছে। বিশেষভাবে লন্ডন প্রবাসী সিলেটিদের কাছে এই ফল বেশ জনপ্রিয়। লন্ডন প্রবাসী সবার পরিবার থেকে কাঁচা, আচার বা শুকনো সাতকরা প্রতিবছর ব্যাপকহারে পাঠানো হয়।

সিলেট অঞ্চলে ঈদ উৎসবে গরুর মাংসের সাথে সাতকরা এ যেন উৎসবে মাঝে আরেক জনপ্রিয় উৎসব। এই ফলের আকৃতি অনেকটাই ছোট জাম্বুরার/ কমলালেবুর মতো এর রস বা শাঁস খাওয়া হয় না।

ব্যতিক্রমি এ ফলের খোসা বিভিন্ন ধরনের রান্নায় তরকারি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। খোসার সুগন্ধ রান্নার মান বৃদ্ধি করে থাকে। খোসা দিয়ে উৎকৃষ্ট মানের আচার তৈরি হয়। বিদেশে সাতকরার খোসা হতে প্রাপ্ত বিশেষ ঘ্রাণযুক্ত রস দিয়ে পারফিউমও তৈরি হয়।

বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিযোগ্য ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সাতকরা।

সাতকরার জাত:
বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট (বারি) হতে ২০০৪ সালে সাতকরার একটি জাত উদ্ভাবন করা হয়। বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতটি উদ্ভাবন করা হয়। ইহা বারি সাতকরা-১ নামে পরিচিত। এটি উচ্চফলনশীল ও নিয়মিত ফলদানকারী জাত।

এ জাতটির গাছ মাঝারি, মধ্যম ছড়ানো ও মধ্যম ঝোপালো আকৃতির হয়ে থাকে। সাধারণত চৈত্র থেকে বৈশাখ মাসে গাছে ফুল আসে এবং শীতের শুরুতে (সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর) ফল পাকতে শুরু করে।

ফল মধ্যম আকারের প্রায় ৩০০ থেকে ৩৩০ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে। আকার আকৃতিতে কমলালেবুর মত চেপ্টা হয়। কাঁচা ফল সবুজ থাকে। তবে পাকা ফল হালকা হলুদ বর্ণের হয়।

সাতকরা বৃহত্তর সিলেট, চট্রগ্রাম ও পার্বত্য অঞ্চলের জেলাসমূহে চাষ উপযোগী। হেক্টরপ্রতি ফলন প্রায় ১০ টনের মতো।

জলবায়ু ও মাটি: বৃষ্টিবহুল আর্দ্র ও উঁচু পাহাড়ী অঞ্চলে সাতকরা ভাল জন্মে। উঁচু, উর্বর, গভীর সুনিষ্কাশিত এবং মৃদু অম্লভাবাপন্ন বেলে দোঁআশ মাটি সাতকরার জন্য উত্তম।

এটেল মাটির পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা কম হওয়ার সাতকরা চাষের অনুপযোগী। সাতকরা উৎপাদনের জন্য বার্ষিক ১৫০০ থেকে ২৫০০ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত এবং ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রী গড় তাপমাত্রা দরকার হয়। সাতকরা চাষের জন্য মাটির আদর্শ অম্লক্ষারত্ব মান (পিএইচ) ৫.৫ থেকে ৬.০।

বংশ বিস্তার: সাতকরা সাধারণত বীজ এবং অঙ্গজ দুই ভাবেই বংশ বিস্তার করে। অঙ্গজ উপায়ের মধ্যে জোড় কলম (ভিনিয়ার ও ক্লেফট গ্রাফটিং) ও কুড়ি সংযোজন (টি বাডিং) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।